<p><span style="font-weight: 400;"><strong>নয়াদিল্লি:</strong> কর্মসূত্রে বাণিজ্যনগরীর বাসিন্দা। কিন্তু জন্মসূত্রে শিকড় প্রোথিত ইতিহাসের পাতায়। খ্যাতি, প্রতিপত্তি, শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারেনি। কিন্তু এই মুহূর্তে জীবনের সন্ধি ক্ষণে দাঁড়িয়ে পতৌদি পরিবারের উত্তরাধিকারী তথা অভিনেতা সেফ আলি খান। শত্রু-সম্পত্তি আইনের আওতায় নবাব পরিবারের সম্পত্তির উপর সরকারি দখলদারি কায়েম হওয়ার মুখে। নিজের বাড়িতে হামলার শিকার হওয়ার পর সবে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন সেফ। চিকিৎসকরা তাঁকে সম্পূর্ণ বিশ্রামের পরামর্শ দিয়েছেন। আর সেই আবহেই নয়া আইনি ঝামেলা নেমে এল জীবনে।</span></p> <p><span style="font-weight: 400;">পূর্বপুরুষের ১৫০০০ কোটি টাকার সম্পত্তি নিয়েই আইনি লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েছেন সেফ। সম্প্রতি মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছে, তাতে পতৌদিদের সম্পত্তি সরকারের দখলে চলে যাওয়ার রাস্তা প্রশস্ত হয়ে গিয়েছে। ১৯৬৮ সালের শত্রু-সম্পত্তি আইনের আওতায় রায় দিয়েছে আদালত। ২০১৭ সালে শত্রু-সম্পত্তি আইনে যে সংশোধন ঘটানো হয়, তার আওতায় ৩০ দিন সময় দেওয়া হয়েছে সেফ এবং তাঁর পরিবারকে। সেই মর্মে আদালতে নিজেদের পক্ষ রাখতে হবে তাঁদের। নইলে সেফের ছোটবেলা কেটেছে যে ফ্ল্যাগ স্টাফ হাউসে, সেটির পাশাপাশি, নুর-উস-সাবা-প্যালেস, দার-উস-সালাম, বাংলো অফ হাবিবি, আহমেদাবাদ প্যালেস, কোহেফিজা এবং অন্যান্য সম্পত্তি সবের উপর সরকারের কর্তৃত্ব কায়েম হবে। এর মধ্যে সেফের ভাগে ফ্ল্যাগ স্টাফ হাউস, কোহেফিজার কিছু অংশ রয়েছে। বহু দিন ধরেই এই আইনি লড়াই চলছে। ২০১৫ সালেই সম্পত্তির মালিকানা ধরে রাখতে আদালতে গিয়েছিলেন সেফ। এবার লড়াই আরও কঠিন।</span></p> <p><strong>শত্রু-সম্পত্তি আইন কী?</strong></p> <p><span style="font-weight: 400;">স্বাধীন ভারতে শত্রু-সম্পত্তি আইন চালু হয়। ওই আইনের আওতায়, ভিটেমাটি ভারতে ফেলে রেখে যাঁরা পাকিস্তান বা চিনের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন, তাঁদের সম্পত্তিকে শত্রু-সম্পত্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ১০৬৫ সালে ইন্দো-পাকিস্তান যুদ্ধের পর আইনটি চালু হয়। ১৯৬২ সালে ইন্দো-চিন যুদ্ধের পর ভিটেমাটি ছেড়ে যান যাঁরা, তাঁদের সম্পত্তির উপরও ওই আইন কার্যকর হয়। ওই আইনের আওতায়, ‘শত্রুদেশে’ চলে যাওয়া লোকজনের ফেলে যাওয়া সম্পত্তি দেখভালের ক্ষমতা পায় সরকার। কেন্দ্রের Custodian of Enemy Property নজরদারির দায়িত্ব পায়। ২০১৭ সালে নরেন্দ্র মোদি সরকার ওই আইনে সংশোধন ঘটায়, যার আওতায় শত্রু দেশে চলে যাওয়া যে কোনও ব্যক্তি বা সংস্থার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার অধিকার পায় কেন্দ্র। অর্থাৎ পাকিস্তান বা চিনে চলে গিয়েছেন যাঁরা, ভারতে বসবাসকারী তাঁদের উত্তরাধিকারীদেও ওই সম্পত্তির উপর কোনও অধিকার থাকবে না। সেই নিরিখে ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ১২৬১১টি সম্পত্তিকে শত্রু-সম্পত্তি বলে চিহ্নিত করা হয়, যার সম্মিলিত বাজারমূল্য় প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকা।</span></p> <p><span style="font-weight: 400;">কেন্দ্রীয় সরকারের Custodian of Enemy Property-ই ভোপালে পতৌদিরে সম্পত্তিকে শত্রু-সম্পত্তি হিসেবে চিহ্নিত করে। ভোপালের নবাব হামিদুল্লা খানের এক মেয়ে আবিদা সুলতান পাকিস্তানে চলে যাওয়াতেই ওই সম্পত্তিকে শত্রু-সম্পত্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু আবিদার আর এক বোন সাজিদা সুুলতান, সেফের ঠাকুরদা ইফতিকার আলি খানকে বিয়ে করেন। বিবাহসূত্রেই ওই সম্পত্তির কিছু অংশের উপর পতৌদিদের মালিকানা স্থাপিত হয়। তাই পতৌদিদের সম্পত্তিকে আদৌ শত্রু-সম্পত্তি বলা উচিত কি না, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। </span></p> <p><strong>পতৌদি পরিবারের ইতিহাস</strong></p> <p><span style="font-weight: 400;">নবাবদের শাসন না থাকলেও, উত্তরাধিকার সূত্রে সেফও পতৌদি নবাব হিসেবেই গণ্য হন। পতৌদি পরিবারের ইতিহাস খুঁজতে বসলে গত ১০০০ বছরের আখ্যান উঠে আসে। আফগানিস্তানের কান্দাহার থেকে ১৪৮০ সালে ভারতে আসেন সালামত আলি খান। কান্দাহার এবং পিশিনের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে তাঁদের আধিপত্য ছিল সেই সময়। ভারতে এসে হরিয়ানার মেওয়াতে বসবাস শুরু করেন তিনি, যা বর্তমানে হরিয়ানা, রাজস্থান এবং উত্তরপ্রদেশের মধ্যে বিভক্ত। সেখানে নিজের রাজত্ব কায়েম করেন সালামত। তাঁর উত্তরাধিকারীরাই পতৌদি নবাব পরিবারের সদস্য হিসেবে গণ্য হন।</span></p> <p><span style="font-weight: 400;">ফৈয়জ তালাব আলি খান প্রথম পতৌদি নবাব। ১৮২৯ সালে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত ক্ষমতায় আসীন ছিলেন তিনি। তাঁর ছেলে মহম্মদ আকবর আলি খান ক্ষমতায় ছিলেন ১৮২৯ থেকে ১৮৬২ সাল পর্যন্ত। আকবর আলি খানের পাঁচ সন্তান, মহম্মদ তাকি আলি খান, ইনায়ত আলি খান, সাদিক খান, জাফর আলি খান এবং মির্জা আসগর আলি খান। এর মধ্যে তাকি আলি ১৮৬২ থেকে ১৮৬৭ সাল পর্যন্ত নবাব ছিলেন। তাঁর ছেলে মুখতার আলি খান ১৮৭৮ সাল পর্যন্ত টিকে ছিলেন ক্ষমতায়। নবাব মুখতারের বিয়ে হয় ঝাজ্জরের নবাব নজাফত আলি খানের নাতনির সঙ্গে। তাঁদের দুই সন্তান, মহম্মদ মুমতাজ হুসেন আলি খান বাহাদুর এবং মহম্মদ মুজফ্ফর আলি খান। </span></p> <p><span style="font-weight: 400;">মহম্মদ মুমতাজ ১৮৭৮ থেকে ১৮৯৮ সাল পর্যন্ত ক্ষমতা ধরে রাখেন। পরবর্তীতে মুজফ্ফর খাম ১৯১৩ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। মুজফ্ফরের সন্তান ছিলেন ইব্রাহিম আলি খান। তিনি লাহৌরের সেহর বানো নবাব মির্জাকে বিয়ে করেন। তাঁদের দুই সন্তান হয়, ইফতিকার আলি খান এবং মহম্মদ শের আলি খান। শের আলি লাহৌর কলেজে পড়তেন, সেনায় প্রশিক্ষণ নেন দেহরাদূণে। পঞ্জাব রেজিমেন্টের প্রথম ব্যাটেলিয়নের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ওয়াশিংটন ডিসি-তে কর্মরত ছিলেন শের আলি। যুদ্ধে সাহসের পরিচয় দেওয়ায় জেনারেলের সম্মান পান। দেশভাগের সময় পাকিস্তান চলে যান শের আলি। ১৯৫৮ সালে মালয়েশিয়ায় পাকিস্তানের হাই কমিশনার নিযুক্ত হন তিনি। পরবর্তীতে পাকিস্তানের টেলিকম মন্ত্রীও হন।</span></p> <p><span style="font-weight: 400;">অন্য দিকে ভারতে থেকে যান ইফতিকার আলি। পতৌদি নবাবদের উত্তরাধিকার তাঁর পরিবারের হাতেই ওঠে। ১৯৪৬ সালে ভারতের জাতীয় ক্রিকেট দলকে ইংল্যান্ডে নেতৃত্বও দেন ইফতিকার। তিনি ভোপালের নবাব হামিদুল্লা খানের মেয়ে বেগম সাজিদা সুলতানকে বিয়ে করেন। হামিদুল্লার আর এক মেয়ে আবিদা সুলতান পাকিস্তান চলে যান। অন্য দিকে, ইফতিকার ছিলেন পতৌদিদের অষ্টম নবাব। ইফতিকারের ছেলে মনসুর আলি খান পতৌদি, যিনি ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ছিলেন। নবাবিয়ানা চলে গেলেও, টাইগার পতৌদি নামেই পরিচিত ছিলেন তিনি। টাইগারের ছেলে সেফ। ঠাকুমার দিক থেকে ভোপালের নবাব পরিবারেরও উত্তরাধিকারী তিনি। তাই মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের মামলায় জড়িয়ে রয়েছেন।</span></p>
from india https://ift.tt/ABgWMYf
via IFTTT
0 Comments