<p>Andhra Murder Case: বিয়ের একমাসের মধ্যেই নিখোঁজ হয়েছিলেন বর। তারপর খাল থেকে উদ্ধার হয় যুবকের দেহ। এই ঘটনায় মৃতের স্ত্রী এবং শাশুড়িকে আটক করেছিল পুলিশ। যুবকের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। কারণ যুবকের পরিবারের অভিযোগ ছিল তাঁদের ছেলের এ হেন পরিণতির জন্য ওই তরুণী এবং তাঁর মা- ই দায়ী। তদন্ত শুরু করে পুলিশ। জোরকদমে চলে জিজ্ঞাসাবাদ। ম্যারাথন জেরার পর পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, ওই যুবককে খুনের পরিকল্পনা করেছিলেন তাঁর নববিবাহিতা স্ত্রী-ই। এক বিবাহত ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল তরুণীর। তার সঙ্গেই মিলেই পরিকল্পনা করেন তরুণী। ভাড়া করেন তিনজনকে। মোট পাঁচজন মিলে যুবককে খুনের ছক কষেন এবং তাঁদের পরিকল্পনা সফলও হয়। </p> <p>মেঘালয়ের ছায়া অন্ধ্রপ্রদেশে। ২৬ বছরের তেজেস্বরের সঙ্গে গত ১৮ মে বিয়ে হয়েছিল ২৩ বছরের ঐশ্বর্যের। বিয়ের একমাসের মধ্যেই নিখোঁজ হয়ে যান তেজেস্বর। পরে একটি খাল থেকে উদ্ধার হয় তেলেঙ্গানার গাদওয়াল জেলার বাসিন্দা তেজেস্বরের নিথর দেহ। জমি জরিপের কাজ করতেন তেজেস্বর। তার পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন নৃত্যশিল্পী। ঐশ্বর্য ছিলেন অন্ধ্রপ্রদেশের কুর্নুল জেলার বাসিন্দা। তাঁর মা সুজাতা একটি ব্যাঙ্কে চাকরি করেন। সেই ব্যাঙ্কেরই ম্যানেজারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল ঐশ্বর্যর। কিন্তু তেজেস্বরকে তিনি বলেছিলেন যে, তিনি তাঁকেই ভালবাসেন। এদিকে বিয়ের আগে একবার উধাও হয়ে যান ঐশ্বর্য। পরে আবার ফিরেও আসেন। মেয়ের রকমসকম দেখে তেজেস্বরকে বিয়ে করতে বারণ করেছিল তাঁর পরিবার। কিন্তু ততদিনে ঐশ্বর্যর প্রেমে কার্যত হাবুডুবু খাচ্ছেন তেজেস্বর। একপ্রকার নাছোড়বান্দা হয়েই পরিবারের অমতে ঐশ্বর্যকে বিয়ে করেন তেজেস্বর। </p> <p>বিয়ের একমাসের মধ্যেই তেজেস্বর যখন নিখোঁজ হয়ে যান, তখন থেকেই ঐশ্বর্য এবং তাঁর মা সুজাতার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিলেন তেজেস্বরের পরিবার। অবশেষে যুবকের রহস্যমৃত্যুর প্রাথমিক ভাবে কিনারা হয়েছে। এই ঘটনার যৌথ ভাবে তদন্ত করছে অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তেলেঙ্গানার পুলিশ। অন্যদিকে পুলিশ সূত্রে খবর, ঐশ্বর্য এবং সুজাতা ছাড়াও তেজেস্বরকে খুনের পরিকল্পনায় ছিলেন তিরুমল রাও নামের এক ব্যক্তি। তিনি অন্ধ্রপ্রদেশের কুর্নুল জেলার Non-Banking Financial Corporation (NBFC)- ব্যাঙ্কের ম্যানেজার। এই ব্যাঙ্কেই চাকরি করেন ঐশ্বর্যর মা সুজাতাও। প্রেমের সম্পর্ক ছিল ঐশ্বর্য এবং বিবাহিত তিরুমলের। এই ২ জন মিলে তিন ব্যক্তির সাহায্যে খুন করিয়েছেন তেজেস্বরকে। পুলিশ সূত্রে খবর, ২ লক্ষ টাকা আগাম দেওয়া হয়েছিল ওই তিনজনকে। পুলিশ আরও জানিয়েছে যে, এই তিন ব্যক্তি তিরুমলের কাছে ঋণ চাইতে গিয়েছিল। </p> <p>পুলিশ জানিয়েছেন, মোট ৮ জন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই তালিকায় ঐশ্বর্য মা সুজাতা যেমন রয়েছেন, তেমনই রয়েছে তিরুমলের বাবা। সুজাতা আগে থেকেই গোটা পরিকল্পনাটা জানতেন। আর তিরুমলের বাবা একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশকর্মী। ছেলের অপরাধ ধামা চাপা দিয়ে তাঁকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছিলেন তিনি। পুলিশ জানিয়েছে, তিরুমল ধরেই নিয়েছিলেন যে তেজেস্বরের দেহ খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাও পালানোর একটা ছক আগে থেকেই তৈরি ছিল তাঁর। ২০ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন তিরুমল। এর পাশাপাশি তাঁর এবং ঐশ্বর্যর জন্য লাদাখের টিকিটও কেটে রেখেছিলেন, পালাবেন বলে। </p> <p>পুলিশ আরও জানিয়েছে, তিরুমলের নিজের স্ত্রীকে শেষ করার পরিকল্পনাও ছিল। ৮ বছর আগে বিয়ে হয়েছিল তাঁদের। তবে কোনও সন্তান হয়নি। এখানেই শেষ নয়। আরও চমক রয়েছে। ঐশ্বর্যর মা সুজাতার সঙ্গেই আগে সম্পর্ক ছিল তিরুমলের। তাঁর ব্যাঙ্কে সাফাইকর্মীর কাজ করতেন সুজাতা। তবে মায়ের অবর্তমানে মেয়ে সেই জায়গা নেই। ঐশ্বর্যর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে তিরুমলের। তবে সুজাতার এই সম্পর্কে মত ছিল না। তিনি মেয়েকে তেজেস্বরকে বিয়ে করার কথা বলেন। তেজেস্বরের সঙ্গে ১৩ ফেব্রুয়ারি বিয়ে ঠিক হয় ঐশ্বর্য। কিন্তু পালিয়ে যান তিনি। পরে ফিরে এসে তেজেস্বরকে বলেন, তিনি গোপনে পালিয়েছিলেন কারণ তাঁর মা পণ দিতে পারবেন না। নাহলে তিনি বিয়েতে রাজি। এই সময়েই ঐশ্বর্যকে বিয়ে করার ব্যাপারে বারণ করে তেজেস্বরের পরিবার। তিরুমলের সঙ্গে সম্পর্কের কথা কানাঘুষো শুনেছিলেন তাঁরা। কিন্তু কোনও কথাই শোনেনি তেজেস্বর। ১৮ মে বিয়ে হয় তেজেস্বর এবং ঐশ্বর্যর। </p> <p>পুলিশ জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারি থেকে জুন মাসের মধ্যে ঐশ্বর্য ও তিরুমল প্রায় ২০০০ বার ফোনে কথা বলেছেন। এমনকি বিয়ের দিনও সারাক্ষণ ফোনেই লেগে ছিলেন ঐশ্বর্য। স্বভাবতই কনের এ হেন আচরণে বিরক্ত হন তেজেস্বরের পরিবার। তবে তর্ক করে ঐশ্বর্য জানান, তিনি তাঁর মায়ের সঙ্গে কথা বলছেন। এরপর ১৮ জুন তেজেস্বরের নিখোঁজ হওয়ার রিপোর্ট দায়ের করে তাঁর পরিবার। ততদিনে খুন হয়ে গিয়েছেন তেজেস্বর। এমনটাই জানিয়েছেন পুলিশের তদন্তকারী আধিকারিকরা। পুলিশের হাতে একটি সিসিটিভি ফুটেজ এসেছে। সেখানে দেখা গিয়েছে, জমি দেখার ছলে তেজেস্বরকে গাড়িতে করে নিয়ে যাচ্ছেন কয়েকজন। গাড়িতে চালকের পাশের আসনে বসেছিলেন তেজেস্বর। সেখানে বসা অবস্থাতেই আততায়ীরা তাঁর গলা কেটে দেয় এবং পেটে ছুরি মারে। এরপর তিরুমলকে ফোন করে তেজেস্বরের দেহ দেখানো হয় এবং তারপর খালে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয় তেজেস্বরের দেহ। </p> <p>পুলিশ জানিয়েছে, খুনিদের পরিকল্পনা ছিল, কুর্নুলে যে জমি দেখতে তারা তেজেস্বরকে নিয়ে যাচ্ছে, সেখানেই তাঁর দেহ পুঁতে দেওয়া হবে। তবে স্থানীয় কয়েকজনকে দেখতে পেয়ে খালেই দেহ ফেলে চম্পট দেইয় আততায়ীরা। তবে খালে বেশি জল ছিল না। মোবাইল ফোনের সিগন্যাল ট্র্যাক করে তেজেস্বরের লোকেশন পায় পুলিশ। তার মধ্যেই পাওয়া যায় দেহও। তেজেস্বরের হাতে থাকা একটি ট্যাটুই চিনিয়ে দেয় তাঁর দেহ। পুলিশ আরও জানিয়েছে, তেজেস্বর নিখোঁজ হওয়ার পর যখন ঐশ্বর্যর শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁর দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলছিল, তখনও দিব্যি শ্বশুরবাড়িতেই ছিলেন ঐশ্বর্য। তেজেস্বরের মৃত্যু সংবাদ আগেই পেয়েছিলেন তিনি। তিরুমল জানিয়েছিলেন। তারপরেও চারদিন শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে একই বাড়িতে ছিলেন ঐশ্বর্য। পরিকল্পনা ছিল কুর্নুলে নিজের বাড়িতে যাবেন তিনি। তারপর সেখান থেকে তিরুমলের সঙ্গে পালাবেন লাদাখে। </p>
from india https://ift.tt/8OtrnaU
via IFTTT
0 Comments