<p><span style="font-weight: 400;"><strong>নয়াদিল্লি:</strong> আমাদাবাদে বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে গুজরাতের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপাণীর। নিজের ‘লাকি’ নম্বর অনুযায়ীই বিমানের ১২ নম্বর আসনে সওয়ার ছিলেন। কিন্তু তার পরও ভাগ্য সহায় হয়নি রূপাণীর ((Vijay Rupani)। তাঁর মৃত্য়ুতে বিজেপি-র অন্দরে শোকের ছায়া। তবে রূপাণীই প্রথম নন, গুজরাতের আরও এক প্রাক্তন মুখ্য়মন্ত্রী বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান। তবে ছয় দশক আগের ওই ঘটনা নিছক দুর্ঘটনা ছিল না, বরং ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আবহে ভুল করে ওই বিমানে হামলা হয়। ( (Ahmedabad Plane Crash)</span></p> <p><span style="font-weight: 400;">১৯৬৩ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯৬৫ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বলবন্তরাই মেহতা। তিনি আজীবন কংগ্রেসি ছিলে, ‘পঞ্চায়েতি রাজে’র রূপকারও বলা হয় তাঁকে। ১৯৬৫ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান মেহতা। সেই সময় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ চলছিল। Beechcraft-এর বিমানে চেপে মিঠাপুরে টাটা কেমিক্যালসের ফ্যাক্টরি থেকে কচ্ছ সীমান্তের দিকে যাচ্ছিলেন তিনি। ভারতীয় বায়ুসেনার প্রাক্তন পাইল, স্কোয়াড্রন লিডার জহাঙ্গির ইঞ্জিনিয়ার বিমান ওড়াচ্ছিলেন। (B</span>alwantrai Mehta)</p> <p><span style="font-weight: 400;">গুজরাতের কচ্ছে ভারত ও পাকিস্তানের সীমান্ত অবস্থান করছে। সেখানে ওই বিমানটিকে হানাদার বিমান বলে ভুল করেন পাক বায়ুসেনার পাইলট কায়েস হুসেন। সেই মতো বিমানটিকে সীমান্তের কাছাকাছি দেখে গুলি করে নামান। আর তাতেই মারা যান মেহতা, জহাঙ্গির-সহ বাকিরা। ওই বিমানে সওয়ার ছিলেন মেহতার স্ত্রী সরোজবেন মেহতা, কো-পাইলট ডি’কস্টা, তাঁর তিন সহযোগী, ‘গুজরাত সমাচারে’র এক সাংবাদিক এবং দুই বিমানকর্মীও। গুজরাতের মুখ্য়মন্ত্রী বিমানে থাকতে পারেন বলে বুঝতেই পারেননি পাক বায়ুসেনার পাইলট হুসেন। (India-Pakistan War)</span></p> <p><span style="font-weight: 400;">যুদ্ধের আবহে পাকিস্তানী নৌবাহিনী সেই সময় উপকূল শহর দ্বারকায় হামলা চালায়। দ্বারকাবাসীকে আশ্বস্ত করতেই সেখানে যাচ্ছিলেন তিনি। জানা যায়, ভারতীয় বায়ুসেনার তরফে প্রথমে উড়ানে অনুমোদনই দেওয়া হয়নি। কিন্তু রাজ্য সরকারের চাপে বিমান ওড়ার অনুমোদন দিতে বাধ্য় হয় তারা। তদন্তে জানা যায়, বিপদ বুঝতে পেরে ভারতীয় বায়ুসেনার ওই বিমানের ডানা ঝাপটান পাইলট জহাঙ্গির। প্রতিপক্ষকে বার্তা দেন যে বিমানে সাধারণ নাগরিক রয়েছেন। কিন্তু পাক বায়ুসনার পাইলট হুসেন জানান, তাঁর কাছে বিমানটিকে নামানোর নির্দেশই আসে। সেই মতো বিমানটির চারিদিকে একবার পাক খেয়ে .50 ক্যালিবর থেকে গুলি ছোড়েন। প্রথম গুলিটি বিমানের বাঁ দিকের ডানায় লাগে। দ্বিতীয় গুলিটি সটান বিমানের ইঞ্জিনকে বেঁধে। মুহূর্তের মধ্যে আগুনের গোলায় পরিণত হয় ভারতীয় বায়ুসেনার বিমানটি। ভুজ থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে, সুথালি গ্রামে ভেঙে পড়ে।</span></p> <p><span style="font-weight: 400;">ওই ঘটনার প্রায় পাঁচ দশক পর, ২০১১ সালের অগাস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে জহাঙ্গিরের কন্যা ফরিদা সিংহকে চিঠি লেখেন পাক বায়ুসেনার পাইলট হুসেন। জানান, পাকিস্তানের এয়ার কন্ট্রোলার বিভাগ নাগরিক বিমানটিকে হানাদার বিমান ভেবে ভুল করে। সেই মতো নির্দেশ আসে তাঁর কাছে। ওই ভুলের জন্য জহাঙ্গিরের মেয়ের কাছে ক্ষমা চান হুসেন। চিঠিতে হুসেন লেখেন, ‘৪৬ বছর আগের ঘটনা হলেও, আমার স্মৃতিতে এখনও তাজা। যেন গতকালের ঘটনা। ৩০০০ ফুট উচ্চতায় ওঁকে দেখতে পাই, এত কাছ দিয়ে উড়ে যাই যে ওঁর মার্কিং এবং বিমানের নম্বরও পড়তে পারি। আপনার বাবা আমার উপস্থিতি টের পেয়ে ডানা ঝাপটাতে থাকেন, ক্রমশ উপরে উঠতে শুরু করেন। আমি গুলি ছোড়ার পরিবর্তে কন্ট্রোলারকে জানাই। ভেবেছিলাম, আমাকে ফিরতে বলা হবে। কিন্তু ৩-৪ মিনিটের নীরবতার পর গুলি ছুড়তে বলা হয় আমাকে। গুলি ছোড়ার পর নিজের কৃতিত্বে সন্তুষ্ট হই আমি। ভেবেছিলাম, অভিযানে সফল হয়েছি, রেকি করতে আসা বিমান ধ্বংস করে যুদ্ধের নতুন রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছি।সেই মতো করাচির মাউরিপুরে নামি। সেখানে সকলে অভিবাদন জানান আমাকে। কিন্তু ওই দিন সন্ধেয় অল ইন্ডিয়া রেডিও যাত্রীদের নাম ঘোষণা করে। আমি কোনও অন্য়ায় কাজ করতে যাইনি, নির্দেশ পালন করেছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে অনেকগুলে মূল্যবান প্রাণ চলে যায়। যেভাবেই হোক না কেন, এমন ঘটনা যে কোনও মানুষের জন্যই যন্ত্রণাদায়ক, আমিও তার ব্যতিক্রম নই’।</span></p> <p><span style="font-weight: 400;">হুসেনকে জবাবি চিঠি পাঠান ফরিদাও। তিনি লেখেন, ‘যিনি গুলি ছুড়েছিলেন, যাঁর গুলিতে বাবার মৃত্যু হয়েছে, তাঁর প্রতি কোনও ঘৃণা, বিদ্বেষ জন্মায়নি আমাদের মনে। দুর্ভাগ্যজনক যুদ্ধ পরিস্থিতিতে, বিভ্রান্তির মধ্যে যে ওই ঘটনা ঘটে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ ছিল না। যুদ্ধ এবং শান্তির এই খেলায় আমরা সকলেই বোড়ে। এই ঘটনা থেকেই স্পষ্ট যে, যুদ্ধ ভাল মানুষকে দিয়েও এমন কাজ করায়। আমি আনন্দিত যে বিষয়টি স্পষ্ট হল, ক্ষতে প্রলেপ পড়ল কিছুটা। দুই দেশের মানুষ ক্ষমাশীল হলে আমার বাবাও শান্তি পাবেন। দিনের শেষে আমরা সকলেই এক’।</span></p> <p><span style="font-weight: 400;">ভারতীয় বায়ুসেনার প্রাক্তন পাইলট জহাঙ্গিররা চার ভাই ছিলেন। তাঁর এক দাদা, এয়ার মার্শাল আসপি ইঞ্জিনিয়ার চিফ অফ এয়ার স্টাফ ছিলেন, আর এক দাদা ছিলেন এয়ার মার্শাল মিনু ইঞ্জিনিয়ার। ১৯৭১ বাংলাদেশ যুদ্ধে ওয়েস্টার্ন এয়ার কম্যান্ডকে নেতৃত্ব দেন তিনি। তৃতীয় দাদা ছিলেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন রনি ইঞ্জিনিয়ার, তিনিও ভারতীয় বায়ুসেনায় মোতায়েন ছিলেন। রূপানীর মৃত্য়ুর পর ছয় দশক আগের ওই ঘটনার স্মৃতি ফিরে আসছে। সম্প্রতি এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনা মারা যাওয়া রূপাণী গুজরাতের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। আর মুখ্যমন্ত্রী পদে আসীন থাকাকালীনই মারা যান মেহতা। </span></p>
from india https://ift.tt/uTVeEsw
via IFTTT
0 Comments